বিশ্বব্যাপী করোনা দুর্যোগের কারণে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। তবে ওই সময় সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে তেমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি।
এখন সেই পরিস্থিতি সামলে ওঠার সর্বোচ্চ চেষ্টার মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কায় আবারও অনিশ্চয়তায় পড়তে চলেছে বিশ্ব। বাংলাদেশেও তার ঢেউ ইতোমধ্যে আছড়ে পড়তে শুরু করেছে।
জাতিসংঘ থেকে বারবার সতর্ক করে বলা হচ্ছে, দ্রুত যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান না হলে খুব তাড়াতাড়ি খাদ্যঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অভ্যন্তরীণ কৃষির উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের জন্য সুখবর রেখে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করলেন ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সম্ভাব্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার ব্যয়ের বাজেট।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলার চেষ্টা করেছেন, ‘করোনার মতো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সম্ভাব্য সংকটও তিনি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। ‘এর লক্ষ্যে করোনামুক্ত স্বাভাবিক সময়ে সবার আগে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব রাখতে চেয়েছেন কৃষিতেই।
একই সঙ্গে বাজেটে নেয়া নানা পদক্ষেপে অর্থমন্ত্রী বলতে চেয়েছেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্যঝুঁকির যে শঙ্কা রয়েছে, দেশকে সেই ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই। তবে এই উৎপাদন বাড়াতে দরকার কৃষকদের উৎসাহিত করা। পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা এবং তার বাজারজাত ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটানো। এর পাশাপাশি সুলভ মূল্যে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পণ্যটিও ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয়া। প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি তারই প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন।
অর্থমন্ত্রীর উপস্থাপিত বাজেট বক্তব্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে তিনি বাজেটে বাড়তি প্রণোদনার ব্যবস্থা রেখেছেন। এ জন্য আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন ১৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যার আকার ছিল মাত্র ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে এই বাড়তি প্রণোদনার উদ্যোগ সংশোধিত বাজেট থেকে ৩ হাজার কোটি এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট থেকে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। এটা একক খাত হিসেবে এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। অর্থাৎ খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি এড়াতে উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি বাজেটে অর্থমন্ত্রীর সর্বোচ্চ গুরুত্বই প্রতিফলিত হয়েছে।
শুধু কৃষকদের প্রণোদনাতেই নয়, পরিকল্পিত উৎপাদনের মাধ্যমে ১৭ কোটি মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ধান উৎপাদন ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন ছাড়াও গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য শস্য লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সাড়ে ৪ কোটি টন উৎপাদনের মাইলফলক স্পর্শ করায় নেপথ্যে ভূমিকা রাখতে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেটও বাড়াতে জোর দিয়েছেন। তাই সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া ১০টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মধ্যে বরাদ্দের বিচারে এবার আগের বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি রেখেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়েই।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে তিনি বরাদ্দ রেখেছেন মোট ২৩ হাজার ২২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১৬ হাজার ২০১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, উপযুক্ত প্রযুক্তি ও ফসলের জাত উদ্ভাবন এবং হস্তান্তরের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও টেকসই আধুনিক কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এর জন্য বাজেটে যেসব পদক্ষেপ রাখা হয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এই উদ্যোগ আগামীর কৃষিতে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।